দুধের উপকারিতা: দৈনন্দিন পুষ্টিতে দুধ কেন গুরুত্বপূর্ণ

 দুধ বহু যুগ ধরে আমাদের খাবারের তালিকায় অনন্য একটি উপাদান


। সহজলভ্য, সাশ্রয়ী এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর হওয়ায় সকালের নাশতা থেকে রাতের শোবার আগে—যে কোনো সময়ে দুধ খাওয়া যায়। সঠিক পরিমাণে দুধ আমাদের হাড়, দাঁত, পেশি ও হৃদ্‌স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক; একই সঙ্গে এটি বাড়ায় তৃপ্তি ও শক্তি। তবে কার কী ধরণের দুধ উপযোগী, সেটাও জানা জরুরি।


দুধে কী কী পুষ্টি থাকে


ক্যালসিয়াম: হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে অপরিহার্য।

উচ্চমানের প্রোটিন: পেশি গঠন ও পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।

ভিটামিন ডি (ফর্টিফায়েড দুধে): ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে, হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

ভিটামিন বি১২ ও রিবোফ্লাভিন (বি২): স্নায়ু, রক্তকণিকা ও শক্তি বিপাকে ভূমিকা রাখে।

পটাশিয়াম: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

ফসফরাস: ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিলিয়ে হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখে।

আয়োডিন ও দস্তা (জিঙ্ক): থাইরয়েড ও রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

দুধের প্রধান উপকারিতা


হাড় ও দাঁতের সুরক্ষা: নিয়মিত দুধ বা দুধজাত খাবার (যেমন দই, পনির) কিশোর-কিশোরী, গর্ভবতী ও বয়স্কদের হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। এর সঙ্গে পর্যাপ্ত সূর্যালোক বা ভিটামিন ডি-ও দরকার।

পেশি গঠন ও পুনরুদ্ধার: দুধে থাকা কেজিন ও হুই প্রোটিন ব্যায়ামের পর পেশির ক্ষত পূরণে উপকারী। ক্রীড়াবিদরা অনেক সময় চকলেট মিল্ককে পোস্ট-ওয়ার্কআউট ড্রিঙ্ক হিসেবে নেন।

হৃদ্‌স্বাস্থ্য ও রক্তচাপ: পটাশিয়াম রক্তনালীর নমনীয়তা বাড়িয়ে রক্তচাপ সামাল দিতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট কমাতে চাইলে লো-ফ্যাট/স্কিম দুধ বেছে নিন।

তৃপ্তি ও ওজন ব্যবস্থাপনা: প্রোটিন ও ফ্যাট তৃপ্তি বাড়ায়, ফলে অযথা নাশতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

জলীয় ভারসাম্য ও শক্তি: দুধে জলীয় অংশ, ইলেক্ট্রোলাইট ও ল্যাকটোজ থেকে শক্তি—এগুলো শরীরকে দ্রুত রিফুয়েল করতে সহায়তা করে।

কারা বেশি উপকার পেতে পারেন


শিশু ও কিশোর-কিশোরী: বৃদ্ধি, হাড়ের বিকাশ ও কগনিটিভ ফাংশনে সহায়ক।

গর্ভবতী/স্তন্যদানকারী মা: অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও বি-ভিটামিনের চাহিদা পূরণে সাহায্য।

বয়স্করা: হাড়ের ঘনত্ব ও পেশি ভর বজায় রাখতে উপকারী।

কীভাবে খেলে ভালো


বয়স, স্বাস্থ্য ও লক্ষ্য অনুযায়ী ফুল-ক্রিম, লো-ফ্যাট বা স্কিম—উপযুক্ত দুধ বেছে নিন।

ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকলে ল্যাকটোজ-ফ্রি দুধ বা ফোর্টিফায়েড উদ্ভিজ্জ দুধ (সয়/আলমন্ড/ওট) চেষ্টা করতে পারেন।

চিনি না দিয়ে পান করুন; ইচ্ছা হলে দারুচিনি, এলাচ, হলুদ বা কোকো পাউডার দিয়ে স্বাদ বাড়ান।

ব্যায়ামের পর ১ গ্লাস দুধ পেশি পুনরুদ্ধারে সহায়ক হতে পারে।

নিরাপত্তার জন্য পাস্তুরাইজড দুধ বেছে নিন এবং ঠান্ডা শৃঙ্খলা বজায় রাখুন।

সতর্কতা


দুধ অ্যালার্জি (কেসিন/হুই) থাকলে সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ব্রণ বা ত্বকের সমস্যায় কেউ কেউ দুধে সংবেদনশীল হতে পারেন—নিজের শরীরের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করুন।

উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাটের কারণে কিছু ক্ষেত্রে ফুল-ক্রিম দুধ সীমিত করা ভালো; হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি থাকলে পুষ্টিবিদের সঙ্গে কথা বলুন।

সবশেষে, দুধ একা কোনো “জাদুকরী” খাবার নয়; তবে সুষম খাদ্যতালিকার অংশ হিসেবে এটি প্রতিদিনের পুষ্টি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নিজের প্রয়োজন, স্বাদ ও সহনশীলতা বুঝে দুধকে বুদ্ধিমানের মতো অন্তর্ভুক্ত করুন।








এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাসুদা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url